মিঠাপুকুরে প্রতিনিধি
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করে জ্বালানি তেল পরিমাপে কম দেওয়ার অভিযোগে তিনটি ফিলিং স্টেশনকে জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিকাশ চন্দ্র বর্মণের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে এ জরিমানা করা হয়।
অভিযান ও জরিমানা:
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, রংপুর জেলা কার্যালয়ের সহায়তায় পরিচালিত এই অভিযানে তিনটি ফিলিং স্টেশনকে মোট ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
হাসনা পাম্প ফিলিং স্টেশন (গড়ের মাথা): ২০ হাজার টাকা
রওশন ফিলিং স্টেশন (মোসলেম বাজার): ৫০ হাজার টাকা
মন্ডল ফিলিং স্টেশন (শুকুরেরহাট): ১ লাখ টাকা
মন্ডল ফিলিং স্টেশনে তেল পরিমাপে কারচুপি: ভোক্তাদের সঙ্গে মাসে লক্ষ টাকা প্রতারণা।
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শুকুরেরহাট এলাকায় অবস্থিত মন্ডল ফিলিং স্টেশন দীর্ঘদিন ধরে তেল পরিমাপে কারচুপি করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। প্রতিদিন শত শত মোটরসাইকেল ও গাড়িচালক নির্দিষ্ট মূল্যে তেল নিলেও প্রকৃত পরিমাণের চেয়ে কম পাচ্ছেন, যা মাসে লাখ টাকার বেশি লুটপাটের সমান!
১০০ টাকার তেলে ২০ টাকা চুরি!
স্থানীয় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, মন্ডল ফিলিং স্টেশন থেকে ১০০ টাকার তেল নিলে ২০ টাকার তেল কম দেওয়া হয়। অর্থাৎ, প্রতিটি লেনদেনে ২০% পর্যন্ত চুরি করা হচ্ছে!
একজন মোটরসাইকেল চালক বলেন,
“আমি ১০০ টাকার পেট্রোল নিলাম, কিন্তু মিটার দেখেই বুঝতে পারলাম পরিমাণ কম। তেল ফুরিয়ে যাওয়ার গতি দেখে নিশ্চিত হলাম, আমাদের সঙ্গে বড় ধরনের প্রতারণা হচ্ছে!”
মাসে লাখ টাকার লুটপাট!
প্রতিদিন শত শত মানুষ এই পাম্প থেকে তেল নেয়। যদি প্রতিদিন ৫০০ জন গ্রাহকের কাছ থেকে গড়ে ২০ টাকা করে অতিরিক্ত রাখা হয়, তাহলে মাসে এই অঙ্ক দাঁড়ায় ৩ লাখ টাকার বেশি!
এভাবেই বছরের পর বছর তেল পরিমাপে কারচুপি করে ফিলিং স্টেশনটি সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
কর্মচারীদের বেতন উঠে কারচুপির টাকা থেকেই?
অভিযোগ রয়েছে, এই তেল পাম্পের কর্মচারীদের বেতনও এই তেল নয়ছয়ের টাকার মাধ্যমেই চলে! পাম্প মালিকরা কর্মচারীদের স্বাভাবিক বেতন না দিয়ে কারচুপির টাকা থেকেই তাদের ভাগ দেন। ফলে কর্মচারীরাও অনিয়মে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
কারণ ও সতর্কতা:
তদন্তে প্রতিটি পাম্পে ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেন পরিমাপে কম দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। ফলে তেল ব্যবসায়ীদের জরিমানা করার পাশাপাশি সতর্ক করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র বর্মণ জানান, “পরিমাপে কারচুপি করে সাধারণ ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করার সুযোগ নেই। নির্ধারিত মূল্যে সঠিক পরিমাণ তেল সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।”
তিনি আরও জানান, তেল পরিমাপে সঠিকতা বজায় রাখা, মূল্য তালিকা স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করা এবং ভেজাল বা নকল তেল বিক্রি না করার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply